একসময় ঘর থেকে অপমানের সাথে বার করে দেওয়া হয় জিনিসপত্র! জানেন এখন কেমন রয়েছেন অভিনেতা মনোজ মিত্র?









নিজস্ব প্রতিবেদন: বৃদ্ধ বয়সেও এই অভিনেতাকে হতে হয়েছিল হেনস্থার শিকার। বাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তার সমস্ত জিনিসপত্র। কমবেশি আপনারা সকলেই এই অভিনেতাকে চেনেন। তিনি হলেন অভিনেতা মনোজ মিত্র। কেন তার সাথে এইরূপ আচরণ করা হয়েছিল সেটা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি আজকের এই প্রতিবেদনে। মনোজ মিত্র হলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র এবং নাট্যাভিনেতা।
বিখ্যাত নাট্যদল সুন্দরম তার হাতেই গড়ে উঠেছিল। ১৯৩৮ সালের নভেম্বর মাসে খুলনায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম হলো মনোজ কুমার মিত্র। মনোজ মিত্রের বাবার নাম হলো অশোক কুমার মিত্র এবং তার মায়ের নাম রাধারানী মিত্র। তার বাবা তাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। গ্রামের বিভিন্ন পালা পার্বণে অভিনয় দেখে মনোজ মিত্রের এই দিকে আকর্ষণ তৈরি হয়।




গ্রামের একটি অনুষ্ঠানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রোগের চিকিৎসা নামক নাটকে মনোজ মিত্রের প্রথম হাতেখড়ি হয়। ১৯৪৫ সালে ধুলিহর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মনোজ মিত্র। ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে তার পরিবার চলে আসে কলকাতায়। এখান থেকে তারা চলে যান দন্ডিহাটে। এখানে নরেন্দ্র কুমার উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি হয়েছিলেন মনোজ মিত্র।




এই বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছিলেন মনোজ মিত্র। ১৯৫৪ সালে তিনি স্কুল ফাইনাল পাশ করে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, সুব্রত সেন এবং নিপীন্দ্র সাহার মত মানুষদের। ছোট থেকেই অধ্যাপক হতে চেয়েছিলেন মনোজ বাবু। এমনকি তার বাবারও ঠিক তাই ইচ্ছে ছিল। তবে তার থিয়েটারের প্রতি আকর্ষণও ছিল প্রবল পরিমাণে।
পরবর্তীতে বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা করার সুযোগ পেয়েও একদিনের বেশি কাজ করেননি মনোজ মিত্র। ১৯৬১ সালে তিনি রানিগঞ্জের ত্রিবেনী দেবী ভালোটিয়া কলেজে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন। একই সাথে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য নিজের নাম নথিভূক্ত করেছিলেন। এরপর ১৯৬৪ সালে অধ্যাপনার চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় চলে আসেন তিনি।




১৯৬৫ সালে তিনি আবারও নিউ আলিপুর কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। এই সময় সুন্দরমের নাট্য পরিবেশন বেশ কিছুদিনের জন্য স্তদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে তার সাজানো বাগান নাটকটি কালজয়ী গগন মহলে প্রথম অভিনীত হয়। কিন্তু নাটকটির মঞ্চায়ন তার পছন্দ না হওয়ায় আবার নতুন করে সেই নাটকটি লেখেন তিনি।
সেই বছর এই মুক্তাঙ্গনে নাটকটি আবারও অভিনীত হয়। এই সময় থেকেই মনোজ মিত্রের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৮০ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মনোজ মিত্রের এই নাটকটি অবলম্বনে বাঞ্ছারামের বাগান নামের একটি সিনেমা তৈরি করেন। এই সিনেমাতে বাঞ্ছারামের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন স্বয়ং মনোজ মিত্র। এটি ছিল তার অভিনীত প্রথম সিনেমা। রাতারাতি সিনেমাটি দর্শকদের মধ্যে অভূতপূর্ব সারা জাগিয়ে তুলেছিল।




অসংখ্য ছবিতেই অভিনয় করেছেন মনোজ মিত্র। সেই সমস্ত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবি হলো-বৈদ্যুতিক রহস্য, ঘরে-বাইরে, রাখি পূর্ণিমা, মধু মালতি, ময়নাতদন্ত, হুইল চেয়ার প্রভৃতি। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের তাবড় তাবড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন এই অভিনেতা। যাদের মধ্যে অন্যতম সত্যজিৎ রায়, তরুণ মজুমদার, গৌতম ঘোষ, বাসু চ্যাটার্জি, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত,হরনাথ চক্রবর্তী, প্রভাত রায়। দূরদর্শনের কয়েকটি ধারাবাহিকেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন।




এখনো পর্যন্ত ১০০ টির কাছাকাছি নাটক লিখেছেন তিনি। ১৯৭৮ সালে মনোজ মিত্রকে গিরিশচন্দ্র পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়। ১৯৮৫ সালে তাকে সংগীত নাটক একাডেমী পুরস্কারও দেওয়া হয়েছিল । এত বড় মাপের একজন অভিনেতার সাথে ২০১৮ সালে ঘটে যাওয়া একটি বিশ্রী ঘটনা। আদালতের নির্দেশে যতীনদাস রোডের বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল নাট্যকার মনোজ মিত্রকে। তার বিরুদ্ধে ঘর দখল করে দিনের পর দিন ভাড়া না দেবার অভিযোগ উঠেছিল।
ষাট বছর ধরে এখানে ঘর ভাড়া নিয়ে রেখেছিলেন মনোজ মিত্র। জানা গিয়েছিল, সেখানে মূলত নাটকের রিহার্সাল হত। যদিও বাড়িওয়ালা জানিয়েছিলেন বেশ কিছু বছর ধরে আর সেখানে কিছুই হতো না। বারবার অনুরোধের পরেও ঘর ভাড়া না মেটানোয় শেষ পর্যন্ত আদালতের তদস্ত হয়ে যান বাড়ির মালিক। শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ বয়সে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল অভিনেতাকে।











